Friday, September 7, 2018

                                                         বিলুপ্তির পথে কাঠশিল্প




আজ দুপুরে যখন ধর্মসাগরের এদিকটায় আসলাম তখন দেখি উনি এই দুপুরে পুরি খাচ্ছেন। সাথে নিয়ে বসেছেন কাঠের তৈরি অনেক গুলি নাম, মানে মানুষের নাম। উনার নাম মোহাম্মাদ আবুল কাশেম। বাড়ি চান্দিনা। কাঠ শিল্পে আমাদের দেশে প্রায় বিলুপ্তির পথে, এরই মধ্যে উনাকে এসব ব্যবসার সাথে জড়িত থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হলাম। কেননা এই শিল্প যেমন বিলুপ্তির পথে তেমনি এই শিল্পে লোকসানের শিকার হয়ে অনেক কাঠ শিল্পী কিংবা এই শিল্পের সাথে জড়িত বেক্তি বর্গ রা সরে এসেছেন। প্রতিটি নাম উনি ৪০ টাকা দিয়ে বিক্রি করছেন।





লাভ কেমন হয়- জানতে চেয়েছিলাম। উনি বললেন, ১০০০ নাম কিনে আনলে ১০০ নাম ও অনেক সময় বিক্রি হয় না। উনার কথায় বুঝার বাকি রইল না লাভ তেমন একটা হয় না।  
কাঠ মানুষের জীবনের এতই প্রয়োজনীয় যে, জন্মের পর দোলনা থেকে শুরু করে শবযাত্রা পর্যন্ত সবখানেই কাঠ মানুষের সঙ্গী হয়ে আছে। কাঠশিল্পীরাও কাঠের ওপর চাঁদ, তারা, পশুপাখি, লতাপাতা, প্রাকৃতিক পরিবেশসহ বিভিন্ন শিল্পকর্ম খোদাই করে তাদের শৈল্পিকতার ভাব ফুটিয়ে তুলে। পাল এবং সেন যুগেও অন্যান্য ধাতব ভাস্কর্যের পাশাপাশি কাঠ ছিল শিল্পকর্ম তৈরির জনপ্রিয় মাধ্যম। বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী কাঠশিল্প অনেক আধুনিক হয়েছে। কাঠশিল্পীরা যা সুন্দর যা হৃদয়কে স্পর্শ করে তাই তারা নিজস্ব শৈলীতে তাদের নিজ কর্মে খোদাই করেছেন। শুধু আসবাবপত্রই নয়, কাঠশিল্প হিসেবে বাদ্যযন্ত্র, পুতুল, তৈজসপত্র, গৃহসজ্জার সামগ্রী, ভাস্কর্য, নৌকার অলঙ্করণ, একতারা, সারিন্দা, বিচিত্র বীণা ইত্যাদিও তারা তৈরি করে থাকে। কাঠশিল্পের কারুকাজসমৃদ্ধ অনেক শিল্পকর্মই আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমানে কাঠের দুষ্প্র্রাপ্যতা ও দুর্মূল্য, দক্ষ সূত্রধরের অভাব এবং আর্থসামাজিক অবক্ষয়ের ফলে কাঠের আসবাবপত্র তৈরিতে সাধারণ মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তা ছাড়া মজুরির অঙ্ক সাধারণ গৃহস্থের ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি বাংলার কাঠশিল্পীরা যে অসামান্য দক্ষতা দেখিয়েছেন তা যেমন বিস্ময়কর তেমনি গৌরবোজ্জ্বল। তাই কাঠশিল্পের ইতিহাস সমৃদ্ধ ও দীর্ঘস্থায়ী। এই দারুশিল্প বাংলার হাজার হাজার বছর ধরে চলমান রয়েছে। বর্তমানে তা বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে।

No comments:

Post a Comment

My Cousin, Meenam Birthday Celebration